প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্প ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে

নোভেল করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ায় প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পের কাঁচামাল বিগত ডিসেম্বর-২০১৯ হতে আমদানি বন্ধ থাকায় এ শিল্পগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে আগামী জুন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে বুঝা যাচ্ছে, স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসবিএমএ) অন্তর্ভুক্ত প্রায় ৩০টি প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং অ্যাসোসিয়েশনের বাইরে আরো প্রায় ২০০টি প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পপ্রতিষ্ঠান ১০ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসবিএমএ) সাধারণ সম্পাদক মো: রাশেদ খান নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান জানান, শিল্পের ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে খ্যাত প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দেশের ৯৯ শতাংশ ফ্যাক্টরি শেড বিল্ডিং বর্তমানে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং দ্বারা নির্মিত। প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং সাশ্রয়ী, ভূমিকম্প সহনশীল এবং গুণগত মান ঠিক রেখে, এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্স ও কমপ্লায়েন্স মেনে ব্যয় সাশ্রয়ী সর্বোপরি স্বল্প সময়ে স্থাপনযোগ্য। এ জন্য শিল্পকারখানা স্থাপনে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিংয়ের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু এ শিল্পের কাঁচামালের ৯৫ শতাংশ চীন থেকে আমদানি হয়ে থাকে। বিগত ডিসেম্বর থেকে নোভেল করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাস চীনে সংক্রমিত হওয়ার কারণে দেশীয় আমদানিকারকরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
রাশেদ খান বলেন, এ শিল্পের সাথে প্রায় দুই লক্ষাধিক জনবল প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আরো আট লাখ জনবল জড়িত। বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রায় এক লাখেরও বেশি স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক ও কর্মচারী চাকরিচ্যুত এবং মাসিক বেতন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পগুলোতে বর্তমানে চরম সঙ্কটজনক পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় চলমান শিল্পকারখানা, সরকারের সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার ও গুদাম নির্মাণ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। আবার কিছু কিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউনে গেছে।
এসবিএমএ সেক্রেটারি বলেন, কাঁচামারের অভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্ডারের বিপরীতে ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক বিল্ডিং সরবরাহ করতে না পারায় সময়মতো বিল পায়নি বিধায় তাদের ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ, বিল সমন্বয়, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি, কারখানার বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল পরিশোধসহ কোনো কিছু সময় মতো করতে পারেনি বা পারছে না। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী এবং আশাজাগানিয়া হতে পারে।
জনাব রাশেদ খান বলেন, বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পগুলোর পক্ষে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে না। বিশ্বায়নের যুগে বর্তমান সরকার যেসব সেক্টরগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ‘ভিশন ২০২১’ থেকে উন্নয়ন রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এর মধ্যে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্প অন্যতম। কারণ প্রি- ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্প ছাড়া উন্নয়ন তথা শিল্পায়নের কথা বর্তমানে চিন্তাও করা যায় না। বর্তমান এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে অনুদান প্রদানের জন্য অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন এসবিএমএ সেক্রেটারি।
এ ছাড়াও এই শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন বাবদ প্রতি মাসে প্রত্যেক কর্মচারীকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান, প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পগুলোর মাসিক বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ও পানির বিল ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতাদির ওপর আয়কর মওকুফ এবং কারখানাগুলো চালু রাখার জন্য দুই শতাংশ হারে সরল সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান তিনি।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং ছাড়া কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা যেমন ভাবা যায় না তেমনি এ শিল্পের বিকাশ ছাড়া দেশীয় শিল্পের দ্রুত বিকাশ অসম্ভব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়েছে কারণ তিনি সব শিল্পের জন্য এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ দেশীয় শিল্প-ব্যবসায় বাণিজ্য ও সর্বোপরি মরণব্যাধি করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জনাব মো: রাশেদ খান প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পের জন্য আমদানি পর্যায়ে যে ৫ শতাংশ এ্যাডভান্স ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে তা মওকুফ করার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আর এই শিল্পের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ১৮০ দিনের ডেফার্ডের পরিবর্তে ৩৬০ দিনের ডেফার্ড সুবিধা প্রদানেরও ব্যবস্থা রাখা অতীব জরুরি বলে উল্লেখ করেন। প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্পকে বলা হয় ‘শিল্পের শিল্প’। এ জন্য প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং শিল্প বাঁচলে দেশের সব শিল্প বাঁচবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 
  • বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনার ক্রান্তিকালে দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার মানসে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার
  • যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সে জন্য আমরা এসবিএমএ’র পক্ষ থেকে তাঁকে তাঁর সাহসী ও সময়োপযোগি পদক্ষেপের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।